শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্যের নতুন বার্তা : যুক্তরাষ্ট্রের বেড়ি ভাঙছে ইরাক

মধ্যপ্রাচ্যের নতুন বার্তা : যুক্তরাষ্ট্রের বেড়ি ভাঙছে ইরাক

স্বদেশ ডেস্ক: ইরান ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির উত্তপ্ত সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন বছর বরণ করেছেন। নির্বাচনী বছরের প্রথম দিনে তার এ স্বভাবজাত রাজনৈতিক অবস্থানে ঝুঁকি দেখছেন দেশবাসী। সিএনএন বলছে, গতবারের মতো এ বছরও ইরানের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈরিতা চরমে পৌঁছবে। গত রবিবার বিমান হামলার মাধ্যমে তেহরান সমর্থিত ইরাকের মিলিশিয়া কাতায়েব হিজবুল্লাহর ২৫ সদস্য হত্যার মাধ্যমে ট্রাম্প সে বার্তাই দিয়েছেন। ইরানও যে ছাড় দেবে না, সমর্থকরা তা বুঝিয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার নিহতদের জানাজা শেষে মিছিল নিয়ে বিক্ষুব্ধরা ইরাকের রাজধানী বাগদাদের গ্রিন জোনের মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায়। এ সময় তারা ‘আমেরিকা ধ্বংস হোক’ সেøাগানে দেশটির পতাকায় আগুন দেয়। ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়। গতকাল বুধবারও দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। শতাধিক পিএমএফ সদস্য পাথর ছুড়লে, টিয়ার শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেডের মাধ্যমে তাদের সরিয়ে দেয় ইরাকি ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, দূতাবাসে হামলাকে অজুহাত বানিয়ে ওয়াশিংটন তেহরানকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে। তবে এ পন্থা খুব একটা কাজে আসবে না। ট্রাম্পের ভুল মধ্যপ্রাচ্য নীতির কারণেই হয়তো ইরাকে দেশটির আধিপত্যের শেকল ভাঙার সূচনা হচ্ছে।

দূতাবাসে হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে নববর্ষের সন্ধ্যায় টুইটে ট্রাম্প হুমকি দেন, ‘কোনোরকম প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির জন্য ইরানকে “চড়া মূল্য” দিতে হবে। এটি সতর্কবার্তা নয়, হুমকি।’ যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগকে স্পর্ধা আখ্যা দিয়ে ইরান নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও কাতায়েব হিজবুল্লাহর ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।

হুমকির সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে ৭৫০ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয়। আগামী সপ্তাহে সেনা মোতায়েন করা হতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষ সূত্র বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছে, একসঙ্গে চার হাজার সেনা মোতায়েন হবে। আলজাজিরা বলেছে, গত বছর মে মাসে গালফ অঞ্চলে ইরান একাধিক বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করলে, পেন্টাগন ১৪ হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয়। হাতছাড়া হতে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের লাগাম টানতেই সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন করে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। বর্তমানে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইরত ইরাকি সেনাদের প্রশিক্ষণে দেশটিতে ৫ হাজার ২০০ সেনা রয়েছে। ট্রাম্পের হুমকিতে নতুন করে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। যদিও পরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। যে কারও চেয়ে ইরানেরও বেশি শান্তি চাওয়া উচিত। কিন্তু ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করলে কী ঘটবে, আমি নিজেও জানি না।’

টুইটে ট্রাম্পের ভিক্টোরি ল্যাপকে ২০১২ সালে ওবামা প্রশাসনের সময় লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে মার্কিন কনস্যুলেটে হামলার পরের উত্তেজক পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। সে ঘটনা নিয়েও ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের চরম অবনতি হয়। ইরাক, বিশেষ করে দেশটির সরকার দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে চেষ্টা করছে। কিন্তু বিমান হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি তা আরও বৈরী করেছে। ইরাকি সরকার বিমান হামলার কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। এমনকি দূতাবাসের দিকে যাওয়া মিছিলে বাধা দেয়নি নিরাপত্তা বাহিনী। প্রায় এক ঘণ্টা পর ইরাকের ৩০ সেনা এলেও, দূরে অবস্থান নেয়। বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, জনগণের ইচ্ছের প্রতি সরকারের এ অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন বার্তা দিচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877